বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০টি সেতু

বন্ধুরা, কখনো কি ভেবে দেখেছো, যদি নদী বা বড় খাল পার হওয়ার কোনো উপায় না থাকত, তাহলে আমাদের যাতায়াত কত কঠিন হয়ে যেত? ঠিক এই সমস্যার সমাধানই হলো সেতু। এটি কেবল দুটি জায়গাকে সংযুক্ত করে না, বরং মানুষের জীবনযাত্রাকে সহজ করে তোলে, বাণিজ্য বাড়ায়, অর্থনীতিকে গতিশীল করে এবং দেশগুলোর মধ্যে সংযোগ তৈরি করে। আজ আমরা জানবো, সেতু কী, বিশ্বের সবচেয়ে বড় দশটি সেতুর সম্পর্কে বিস্তারিত এবং সেতুর গুরুত্ব কতটুকু।

সেতু কি?

সেতু হলো এক ধরনের কাঠামো যা কোনো বাধা অতিক্রম করে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সংযোগ স্থাপন করে। সাধারণত নদী, খাল, উপত্যকা, রেললাইন কিংবা মহাসড়কের ওপর দিয়ে পারাপারের সুবিধার জন্য সেতু নির্মাণ করা হয়। এটি লোহার, কংক্রিট, কাঠ, স্টিলসহ বিভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরি হতে পারে।

সেতুর প্রকারভেদ বেশ কয়েকটি হতে পারে, যেমন— বিম সেতু, খিলান সেতু, সাসপেনশন সেতু, কেবল-স্টেইড সেতু ইত্যাদি। প্রতিটি সেতুর গঠন ও নির্মাণশৈলী তার অবস্থান ও প্রয়োজন অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে।

সেতু কেবল মানুষ ও যানবাহনের চলাচলই সহজ করে না, এটি একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম মাধ্যমও বটে। বড় বড় শহরের সংযোগ স্থাপনের পাশাপাশি এটি শিল্প ও বাণিজ্যের প্রসার ঘটায়। একসময় আমাদের দেশে বড় সেতুর সংখ্যা কম ছিল, কিন্তু এখন আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বিশাল অবকাঠামো নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছি। তাই সেতুর গুরুত্ব বোঝা খুব দরকার।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০টি সেতু

বিশ্বজুড়ে অসংখ্য বিশাল সেতু রয়েছে, তবে কিছু সেতু তাদের দৈর্ঘ্য, নির্মাণশৈলী ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। আসুন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় দশটি সেতুর সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।

১. ড্যানইয়াং-কুনশান গ্র্যান্ড ব্রিজ (চীন)

ড্যানইয়াং-কুনশান গ্র্যান্ড ব্রিজ বিশ্বের দীর্ঘতম সেতু, যা চীনের বিখ্যাত বেইজিং-শাংহাই উচ্চগতির রেলপথের অংশ। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬৪.৮ কিলোমিটার! এই বিশাল সেতুটি মূলত জলাভূমি, হ্রদ ও সমতল ভূমির ওপর নির্মিত। এটি ২০১১ সালে চালু হয় এবং নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৮.৫ বিলিয়ন ডলার। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই রেলপথ ব্যবহার করে। এটি চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম প্রতীক।

২. চাংহুয়া- কাউশিয়ুং ভায়াডাক্ট (তাইওয়ান)

তাইওয়ানের এই বিশাল সেতুটি প্রায় ১৫৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং এটি বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম সেতু। এটি হাই-স্পিড রেলপথের অংশ এবং ২০০৭ সালে চালু হয়। এই সেতুটির বিশেষত্ব হলো, এটি ভূমিকম্প-প্রতিরোধী প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। তাইওয়ান একটি ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ, তাই এই ধরনের অবকাঠামো তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৩. তিয়ানজিন গ্র্যান্ড ব্রিজ (চীন)

চীনের আরেকটি বিশাল সেতু হলো তিয়ানজিন গ্র্যান্ড ব্রিজ, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১১৩.৭ কিলোমিটার। এটি বেইজিং-শাংহাই রেলপথের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সেতুটি বেশিরভাগই উঁচু স্তম্ভের ওপর তৈরি, যা রেলগাড়ির গতিকে আরও উন্নত করে। এটি নির্মাণে অত্যাধুনিক ইঞ্জিনিয়ারিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।

৪. বাইয়াংডিয়ান ব্রিজ (চীন)

এই সেতুটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১০৫ কিলোমিটার। এটি বেইজিং-শাংহাই উচ্চগতির রেলপথের একটি অংশ। এই সেতুটি জলাভূমি ও জলাশয়ের ওপর নির্মিত, যা পরিবেশের ওপর কম প্রভাব ফেলে। এটি টেকসই নির্মাণের এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

৫. বেইজিং গ্র্যান্ড ব্রিজ (চীন)

প্রায় ৭৯.৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতু চীনের অন্যতম দীর্ঘ সেতু। এই সেতুর বিশেষত্ব হলো, এটি ট্রেনের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। এটি চীনের দ্রুতগতির রেল সংযোগ উন্নয়নের অন্যতম নিদর্শন।

৬. পাদ্মা সেতু (বাংলাদেশ)

বাংলাদেশের গর্বের প্রতীক পদ্মা সেতু প্রায় ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। এটি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সরাসরি সংযোগ তৈরি করেছে। পদ্মা সেতু দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে।

৭. ইয়াংকুন ব্রিজ (চীন)

এটি চীনের একটি দীর্ঘ সেতু যা প্রায় ৭৯ কিলোমিটার দীর্ঘ। সেতুটি বেশিরভাগই জলাশয়ের ওপর নির্মিত, যা এর নির্মাণশৈলীকে আরও চ্যালেঞ্জিং করেছে।

৮. ম্যানচাক সোয়াম্প ব্রিজ (যুক্তরাষ্ট্র)

যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত এই সেতুটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৬.৭ কিলোমিটার। এটি একটি দ্বিগুণ লেনের মহাসড়ক সেতু, যা জলাভূমির ওপর নির্মিত এবং ভূমিকম্প প্রতিরোধী।

৯. লেক পন্টচারট্রেইন কজওয়ে (যুক্তরাষ্ট্র)

৩৮.৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুটি লুইজিয়ানার দুটি অংশকে সংযুক্ত করেছে। এটি ১৯৫৬ সালে প্রথম অংশ এবং ১৯৬৯ সালে দ্বিতীয় অংশ চালু হয়। এটি বিশ্বের দীর্ঘতম পানির ওপর নির্মিত সেতু হিসেবে বিখ্যাত।

১০. ব্যাং নাও ব্রিজ (চীন)

এই সেতুটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৮৫ কিলোমিটার এবং এটি চীনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রেলসেতু। এই সেতু পরিবহন খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে এবং চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বিশাল ভূমিকা রেখেছে।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ

“বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০টি সেতু” এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? তাহলে চলুন জেনে নেই সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তরগুলো-

সেতু কেন নির্মাণ করা হয়?

নদী, উপত্যকা বা মহাসড়কের ওপর দিয়ে সহজে পারাপারের জন্য সেতু নির্মাণ করা হয়। এটি যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করে।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেতুটি কোনটি?

বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেতু হলো চীনের “ড্যানইয়াং-কুনশান গ্র্যান্ড ব্রিজ”, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬৪.৮ কিলোমিটার।

উপসংহার

বন্ধুরা, সেতু শুধু ইট-পাথর আর লোহার কাঠামো নয়, এটি একটি দেশের অগ্রগতির প্রতীক। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি এই বিশাল সেতুগুলো মানুষের জীবনযাত্রা সহজ করছে, ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াচ্ছে এবং দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে। বাংলাদেশও পদ্মা সেতুর মাধ্যমে একটি নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। ভবিষ্যতে আরও অনেক বড় প্রকল্পের মাধ্যমে দেশ এগিয়ে যাবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *