Women Ceaser

সিজারের পর কি কি খাওয়া যাবে না?

আমাদের দেশে আজকাল অনেক বেশি সিজারিয়ান ডেলিভারি (C-section) হচ্ছে। আগের তুলনায় এখন অনেক মায়েরা সিজারের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিচ্ছেন, যা কখনো কখনো জরুরি এবং অপরিহার্য হলেও, অনেক সময় তা অনিচ্ছাকৃতভাবেও করা হয়। কিন্তু সিজারিয়ান ডেলিভারির পর মায়ের শরীরের যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, খাবারের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া দরকার, কারণ অপারেশনের পর সঠিক খাবার না খেলে দ্রুত সুস্থ হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। আজকের এই লেখায় আমরা সিজার সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো এবং বিশেষ করে, কোন কোন খাবার সিজারের পর এড়িয়ে চলা উচিত তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

সিজার কি?

সিজার বা সিজারিয়ান ডেলিভারি (Cesarean Delivery) হলো একটি অস্ত্রোপচার প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মায়ের পেট ও গর্ভাশয়ে কাটার মাধ্যমে শিশুকে বের করা হয়। সাধারণত নরমাল প্রসব সম্ভব না হলে, বা মায়ের কিংবা শিশুর জীবন ঝুঁকিতে থাকলে এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়।

সিজারের বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। যেমন—শিশুর অবস্থান উল্টে থাকা (ব্রীচ বেবি), প্ল্যাসেন্টার জটিলতা, প্রসবের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত, শিশুর বড় আকৃতি, বা মায়ের স্বাস্থ্যগত জটিলতা। বর্তমানে আমাদের দেশে অনেক ডাক্তার প্রয়োজন ছাড়াই সিজারের পরামর্শ দেন, যা অনেক সময় মায়েদের জন্য অপ্রয়োজনীয় শারীরিক কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

সিজার একটি বড় অপারেশন, তাই এর পর দ্রুত সুস্থ হতে হলে খাদ্যাভ্যাসের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। অপারেশনের পর শরীর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে সময় লাগে, এবং এই সময়ে কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উচিত, যা ক্ষতস্থানে ব্যথা বাড়াতে পারে বা হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই, কোন কোন খাবার সিজারের পর খাওয়া উচিত নয়, তা জানা খুবই জরুরি।

সিজারের পর কি কি খাওয়া যাবে না?

সিজারের পর মায়ের শরীর খুবই দুর্বল থাকে এবং বিভিন্ন শারীরিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। এই সময় এমন কিছু খাবার খাওয়া উচিত নয় যা ক্ষতস্থানে সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে, গ্যাস তৈরি করতে পারে, বা হজমের সমস্যা বাড়াতে পারে। চলুন, জেনে নিই সিজারের পর কোন খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত।

১. অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার

সিজারের পর মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া মোটেও উচিত নয়। অতিরিক্ত ঝাল, তেল-মশলা যুক্ত খাবার খেলে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং পেট ফাঁপার সমস্যা হতে পারে। সিজারের পর অন্ত্রের কার্যকারিতা কিছুটা দুর্বল থাকে, তাই এই ধরনের খাবার খেলে পেটে গ্যাস জমে ব্যথা বাড়তে পারে।

মসলা, বিশেষ করে লবঙ্গ, এলাচ, দারুচিনি, শুকনা মরিচ, বা গরম মশলা, শরীরে তাপ উৎপন্ন করে যা ক্ষতস্থানে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া এই ধরনের খাবার বুকজ্বালার সমস্যা বাড়াতে পারে, যা নতুন মায়েদের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে। তাই অন্তত প্রথম এক মাস মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো।

২. ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় (চা, কফি, কোলা)

সিজারের পর চা, কফি, বা ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় খাওয়া উচিত নয়। ক্যাফেইন শরীর থেকে পানি শোষণ করে ফেলে, যার ফলে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়তে পারে। এছাড়া, চা বা কফি হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং অপারেশনের পর কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রবণতা বাড়াতে পারে।

অনেক মা প্রসবের পর ক্লান্তি দূর করতে চা বা কফি খেতে চান, কিন্তু এটি দুধ পান করানো শিশুর ক্ষেত্রেও ক্ষতিকর হতে পারে। ক্যাফেইন শিশুর ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এবং তারও হজমে সমস্যা হতে পারে। তাই চা-কফির বদলে হালকা গরম পানি, স্যুপ বা ভেষজ চা খাওয়া ভালো।

৩. কোল্ড ড্রিংকস এবং বরফযুক্ত খাবার

সিজারের পর ঠান্ডা পানীয় বা বরফযুক্ত খাবার খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। ঠান্ডা খাবার শরীরে রক্ত সঞ্চালনের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এবং ক্ষতস্থানে ব্যথা বাড়াতে পারে। অনেক সময় ঠান্ডা পানীয় বা আইসক্রিম খেলে শরীরে ঠান্ডা জমে গিয়ে জ্বর বা ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়তে পারে।

বিশেষ করে, যদি নতুন মা বুকের দুধ খাওয়ান, তাহলে ঠান্ডা পানীয় শিশুর জন্যও সমস্যা তৈরি করতে পারে। শিশুর পেটে গ্যাস হতে পারে বা সে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। তাই এই সময় ঠান্ডা খাবার না খাওয়াই ভালো।

৪. বেশি তেল-চর্বিযুক্ত খাবার

অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত খাবার সিজারের পর হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ঘি, অতিরিক্ত ভাজা-পোড়া খাবার, ফাস্ট ফুড ইত্যাদি খেলে শরীরে ফ্যাট জমে যায়, যা সুস্থ হওয়ার প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়।

তেল-চর্বিযুক্ত খাবার খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা সিজারের পর প্রচণ্ড ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। তাই এই সময় কম তেলযুক্ত এবং সহজপাচ্য খাবার খাওয়া উচিত।

৫. গ্যাস উৎপন্নকারী খাবার

সিজারের পর এমন খাবার এড়িয়ে চলা উচিত যা পেটে গ্যাস তৈরি করে। বাঁধাকপি, শিম, ছোলা, মটরশুঁটি, কলা, ডাল ইত্যাদি খেলে পেটে ব্যথা হতে পারে। অপারেশনের পর অন্ত্রের কার্যকারিতা দুর্বল থাকে, তাই এই ধরনের খাবার হজম হতে সময় নেয় এবং অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।

৬. অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার

সিজারের পর বেশি চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া উচিত নয়। এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে এবং দেহের স্বাভাবিক নিরাময় প্রক্রিয়াকে ধীর করতে পারে।

৭. অ্যালকোহল এবং ধূমপান

অ্যালকোহল এবং ধূমপান শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং সিজারের ক্ষত ভালো হতে দেরি হয়।

৮. কাঁচা খাবার

কাঁচা ফলমূল, কাঁচা সবজি বা অপরিষ্কার পানি থেকে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়তে পারে।

৯. অতিরিক্ত নুনযুক্ত খাবার

অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার শরীরে পানি ধরে রাখে, যা সিজারের পর ফোলাভাব বাড়াতে পারে।

১০. প্রক্রিয়াজাত খাবার

বাজারের প্রক্রিয়াজাত খাবারে অনেক কেমিক্যাল থাকে, যা অপারেশনের পর শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ

“সিজারের পর কি কি খাওয়া যাবে না?” এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? তাহলে চলুন জেনে নেই সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তরগুলো-

সিজারের পর কবে থেকে স্বাভাবিক খাবার খাওয়া যাবে?

সাধারণত এক মাস পর থেকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক খাবারে ফিরে আসা যায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।

সিজারের পর পানি বেশি খাওয়া উচিত কি?

হ্যাঁ, প্রচুর পানি খেলে ক্ষত দ্রুত ভালো হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমে।

উপসংহার

সিজারের পর শরীরের দ্রুত সুস্থতার জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস গঠন করা জরুরি। ভুল খাবার খেলে হজমের সমস্যা, ক্ষতস্থানে প্রদাহ, কিংবা অতিরিক্ত ব্যথা হতে পারে। তাই এই সময় সহজপাচ্য, পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাবার খাওয়া উচিত এবং ঝুঁকিপূর্ণ খাবার থেকে দূরে থাকা দরকার।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *