problems-with-diabetes

ডায়াবেটিস হলে কি কি সমস্যা হয়?

হ্যালো বন্ধুরা! আশা করি তোমরা সবাই ভালো আছো। আজ আমরা এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলব, যা আমাদের অনেকের জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে—ডায়াবেটিস। বাংলাদেশে দিন দিন ডায়াবেটিসের সংখ্যা বেড়েই চলেছে, এবং এটি এখন শুধু বড়দের নয়, ছোটদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে। কিন্তু আমরা অনেকেই ডায়াবেটিস সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখি না বা এটি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের সঠিক উপায় জানি না।

এই ব্লগে আমরা সহজ ভাষায় ডায়াবেটিস কী, এটি হলে কী কী সমস্যা হয়, এবং কীভাবে এটি প্রতিরোধ করা যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করি এই লেখা তোমাদের জন্য উপকারী হবে। তাহলে, চল শুরু করা যাক!

ডায়াবেটিস কি?

ডায়াবেটিস হলো এমন একটি রোগ, যেখানে রক্তে শর্করার (গ্লুকোজ) পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়ে যায়। আমাদের শরীরের একটি বিশেষ অঙ্গ, অগ্ন্যাশয় (Pancreas), ইনসুলিন নামে একটি হরমোন তৈরি করে, যা আমাদের রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু যখন শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না বা ইনসুলিন ঠিকমতো কাজ করে না, তখন রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়, আর একেই বলে ডায়াবেটিস।

ডায়াবেটিস সাধারণত দুই ধরণের হয়—টাইপ ১ ও টাইপ ২। টাইপ ১ ডায়াবেটিস হলে শরীর একেবারেই ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না, তাই এটি নিয়ন্ত্রণের জন্য ইনসুলিন ইনজেকশন নেওয়া প্রয়োজন। অন্যদিকে, টাইপ ২ ডায়াবেটিসে শরীর ইনসুলিন তৈরি করলেও তা সঠিকভাবে কাজ করে না।

বাংলাদেশে টাইপ ২ ডায়াবেটিস সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, যা মূলত অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রা, অনিয়মিত খাবার, কম পরিশ্রম, অতিরিক্ত ওজন ও বংশগত কারণে হয়ে থাকে। এছাড়া, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নামে আরেকটি ধরন রয়েছে, যা অনেক মায়ের গর্ভাবস্থায় দেখা দেয়। যদিও এটি অনেক সময় ডেলিভারির পর ঠিক হয়ে যায়, তবে ভবিষ্যতে টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।

ডায়াবেটিস হলে শরীরের বিভিন্ন অংশে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এটি শুধুমাত্র রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয় না, বরং সঠিক নিয়ন্ত্রণ না করলে দীর্ঘমেয়াদী জটিলতাও তৈরি করতে পারে। তাই ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরি।

ডায়াবেটিস হলে কি কি সমস্যা হয়?

ডায়াবেটিস হলে শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। এটি ধীরে ধীরে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে নানা জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে। এখন আমরা ডায়াবেটিসের কারণে হওয়া বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

১. হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়

ডায়াবেটিস হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ। এটি রক্তনালীকে সংকীর্ণ করে দেয়, যার ফলে রক্ত সঠিকভাবে প্রবাহিত হতে পারে না। এ কারণে হৃদযন্ত্র ঠিকমতো কাজ করতে পারে না এবং হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজ থাকলে ধমনীগুলোতে ফ্যাট জমতে শুরু করে, যা একসময় রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। এই অবস্থাকে বলা হয় ‘অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস’। এছাড়া, ডায়াবেটিস উচ্চ রক্তচাপের কারণও হতে পারে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করাও জরুরি।

২. কিডনির সমস্যার সৃষ্টি করে

ডায়াবেটিস কিডনির ক্ষতি করতে পারে, যাকে ‘ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি’ বলা হয়। কিডনি আমাদের শরীর থেকে অতিরিক্ত তরল ও বর্জ্য বের করে দেয়, কিন্তু ডায়াবেটিস থাকলে কিডনির ছোট ছোট রক্তনালী নষ্ট হতে শুরু করে, ফলে কিডনি ঠিকমতো কাজ করতে পারে না।

এই সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে পায়ে ও মুখে ফোলা, প্রস্রাবে পরিবর্তন, এবং ক্লান্তি অনুভব করা। সময়মতো চিকিৎসা না করলে কিডনির সম্পূর্ণ কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে, যার ফলে কিডনি ডায়ালাইসিস বা প্রতিস্থাপনের (ট্রান্সপ্লান্ট) প্রয়োজন হতে পারে।

৩. চোখের সমস্যা তৈরি করে

ডায়াবেটিস চোখের রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যা ‘ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি’ নামে পরিচিত। এটি দৃষ্টিশক্তি কমিয়ে দিতে পারে এমনকি অন্ধত্বের কারণও হতে পারে।

ডায়াবেটিসজনিত চোখের সমস্যার মধ্যে থাকে ঝাপসা দেখা, রাতে ভালো না দেখা, এবং চোখের সামনে কালো দাগ বা ছোপ পড়া। অনেক সময় কোনো লক্ষণ ছাড়াই ধীরে ধীরে চোখের ক্ষতি হতে থাকে, তাই নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করানো জরুরি।

৪. স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত করে

ডায়াবেটিস দীর্ঘ সময় ধরে অনিয়ন্ত্রিত থাকলে স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যাকে ‘ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি’ বলা হয়। এতে হাত-পা ঝিমঝিম করা, ব্যথা, শিরশির অনুভূতি, এবং কখনো কখনো অসাড়তা দেখা দিতে পারে।

এই সমস্যা সাধারণত পায়ে বেশি দেখা যায়, এবং এটি মারাত্মক হলে পায়ের সংবেদনশীলতা হারিয়ে যেতে পারে। ফলে পায়ে ছোটখাটো আঘাত বা ক্ষত হলে টের পাওয়া যায় না, যা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।

৫. গর্ভবতী মায়েদের জটিলতা বাড়ায়

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে গর্ভবতী মা ও শিশুর উভয়ের জন্যই ঝুঁকি বাড়ে। এটি শিশুর অতিরিক্ত ওজন, প্রি-ম্যাচিউর জন্ম, জন্মগত ত্রুটি, এবং মায়ের উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে।

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস থাকলে মা ও শিশুর ভবিষ্যতে টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। তাই গর্ভাবস্থায় সুগার নিয়ন্ত্রণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৬. সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়

ডায়াবেটিস রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, ফলে তারা সহজেই বিভিন্ন সংক্রমণে আক্রান্ত হতে পারেন। এটি বিশেষ করে চর্মরোগ, দাঁতের সমস্যা, মূত্রনালীর সংক্রমণ এবং ফুসফুসের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।

৭. ক্ষত শুকাতে দেরি হয়

ডায়াবেটিস থাকলে শরীরের ক্ষত দ্রুত শুকায় না। এটি সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়, এবং মারাত্মক হলে পায়ের গ্যাংগ্রিন হতে পারে, যা অনেক সময় পা কেটে ফেলতে বাধ্য করে।

৮. মানসিক চাপ ও বিষণ্নতা বাড়ায়

ডায়াবেটিস শুধুমাত্র শারীরিক নয়, মানসিক সমস্যাও তৈরি করতে পারে। এটি উদ্বেগ, ক্লান্তি, এবং হতাশা বাড়িয়ে তোলে।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ

“ডায়াবেটিস হলে কি কি সমস্যা হয়?” এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? তাহলে চলুন জেনে নেই সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তরগুলো-

ডায়াবেটিস কি সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়?

না, এটি পুরোপুরি ভালো হয় না, তবে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

ডায়াবেটিস হলে কি মিষ্টি খাওয়া একেবারে বন্ধ করতে হবে?

না, পরিমিত পরিমাণে ও বিশেষজ্ঞের পরামর্শে খাওয়া যেতে পারে।

উপসংহার

ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা হলেও এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, ওষুধ গ্রহণ এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে এটি সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

তাই, এখন থেকেই স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন শুরু করো, যাতে ভবিষ্যতে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমানো যায়। সুস্থ থাকো, ভালো থাকো!

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *