সাত দিনের নাম ইংরেজিতে

হ্যালো বন্ধু! আজ আমি তোমার সঙ্গে খুব পরিচিত, কিন্তু অনেক সময় গুরুত্ব দিয়ে না দেখা একটি বিষয়ে কথা বলতে চাই। আমরা প্রতিদিনই যেসব শব্দ ব্যবহার করি, সেগুলোর পেছনে কত মজার তথ্য লুকিয়ে থাকে, সেটা কি ভেবেছো কখনো? আজ আমরা জানবো দিনের নাম নিয়ে। সপ্তাহের প্রতিটি দিন যেমন আমাদের জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে, ঠিক তেমনই এদের নামকরণের পেছনেও রয়েছে ইতিহাস, কুসংস্কার, বিজ্ঞান আর ভাষার মিশ্র একটা গল্প। বিশেষ করে বাংলা ভাষাভাষী হিসেবে আমাদের জানার উচিত এই নামগুলোর উৎপত্তি, ইংরেজি নামগুলো এবং তাদের মানে। তাহলে চল, একসাথে জেনে নেই দিনের নাম নিয়ে এই চমৎকার ভ্রমণ!

দিনের নাম কি?

দিনের নাম বলতে আমরা বুঝি সপ্তাহের সাতটি দিনকে আলাদা করে চিহ্নিত করার জন্য যেসব নাম ব্যবহার করা হয়। যেমন সোমবার, মঙ্গলবার, বুধবার ইত্যাদি। এই নামগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সময় পরিকল্পনায় সাহায্য করে। প্রতিদিনের কাজ, স্কুল, অফিস, বা বিশেষ কোন অনুষ্ঠান—সব কিছুই নির্ভর করে এই দিনের উপর।

আমাদের ক্যালেন্ডার বা দিনপঞ্জি তৈরি করা হয়েছে এই সাত দিনের ভিত্তিতে। তবে জানো কি, এই সাত দিনের ধারণা কিন্তু এসেছে প্রাচীন সভ্যতা থেকে। ব্যাবিলনীয়, রোমান, হিন্দু কিংবা ইসলামিক সংস্কৃতিতেও সাত দিনের ব্যাপারটি ছিল অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তারা গ্রহ-নক্ষত্র, দেবতা বা প্রাকৃতিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিটি দিনের নাম দিয়েছে।

বাংলা ভাষায় সপ্তাহের দিনের নাম এসেছে মূলত সংস্কৃত ও হিন্দুধর্মীয় সংস্কৃতি থেকে। ইংরেজিতে আবার রোমান ও নর্স (Norse) সংস্কৃতির প্রভাব রয়েছে। সুতরাং, আমরা যখন কোনো দিনের নাম উচ্চারণ করি, তখন আসলে একধরনের ইতিহাসের অংশ হয়ে যাই!

সাত দিনের নাম ইংরেজিতে

আমরা প্রতিদিন যেসব দিন নিয়ে চলি, সেগুলোর ইংরেজি নাম অনেক সময় আমাদের বিভ্রান্ত করে। তবে এগুলোর পেছনের গল্প জানলে খুব সহজ হয়ে যাবে মনে রাখা আর বোঝা।

Monday

“Monday” শব্দটি এসেছে প্রাচীন ইংরেজি শব্দ Monandæg থেকে, যার মানে “Moon’s day” বা “চাঁদের দিন”। এই নামকরণ করা হয়েছে চাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে। চাঁদকে বহু সংস্কৃতিতে নারী শক্তির প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। প্রাচীন রোমান, গ্রিক ও নর্স সংস্কৃতিতে চাঁদের জন্য আলাদা দেবতা ছিল। যেমন রোমানদের কাছে চাঁদের দেবী ছিলেন ‘Luna’। ইংরেজি ক্যালেন্ডারে তাই সপ্তাহের দ্বিতীয় দিনটি চাঁদের নামে নামকরণ করা হয়েছে।

বাংলায় এই দিনটিকে বলা হয় “সোমবার”, যা এসেছে “সোম” বা “সোমদেব” থেকে—যিনি হিন্দুধর্মে চন্দ্রদেবতা। এইভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ইংরেজি ও বাংলা দুই ভাষাতেই এই দিনের নাম চাঁদের সাথে সম্পর্কিত। এই দিনটি সাধারণত সপ্তাহের শুরুর কর্মদিবস হিসেবে ধরা হয়। অনেকেই সোমবারকে ‘বোরিং’ বা ক্লান্তির দিন মনে করে, কারণ লম্বা ছুটির পর অফিস বা ক্লাসে ফিরতে হয়!

Tuesday

“Tuesday” এসেছে Old English শব্দ Tiwesdæg থেকে। Tiw ছিলেন নর্স দেবতা যিনি যুদ্ধ ও ন্যায়ের প্রতীক। রোমানদের যুদ্ধদেবতা ছিলেন Mars। তাই ল্যাটিন ভাষায় এই দিনের নাম dies Martis। পরে জার্মানিক ভাষায় Mars-এর জায়গায় Tiw নাম ঢুকে যায়, যার ফলে তৈরি হয় Tuesday।

বাংলায় বলা হয় “মঙ্গলবার”—যার উৎপত্তি মঙ্গল গ্রহ এবং হিন্দু দেবতা ‘মঙ্গল’ থেকে। মঙ্গলকে যুদ্ধ ও শক্তির প্রতীক হিসেবেই দেখা হয়। Tuesday এবং মঙ্গলবার—দুটিই যুদ্ধ এবং শক্তির ধারণা বহন করে। এই দিনটিতে সাহসিকতা, উদ্যোগ এবং আত্মবিশ্বাসের প্রভাব বেশি বলে বিশ্বাস করা হয় অনেক সংস্কৃতিতে।

Wednesday

“Wednesday” এসেছে Woden’s day বা ওডিনের দিন থেকে। ওডিন ছিলেন নর্স পুরাণের প্রধান দেবতা, যিনি জ্ঞানের, কবিতার ও মৃত্যুর দেবতা হিসেবে পরিচিত। রোমানদের কাছে এই দিনটি ছিল dies Mercurii, অর্থাৎ বাণিজ্য ও যোগাযোগের দেবতা মেরকিউরির দিন।

বাংলায় বলা হয় “বুধবার”, যার সঙ্গে যুক্ত হিন্দু দেবতা ‘বুধ’ এবং গ্রহ ‘বুধ’ (Mercury) এর নাম। বুধদেবতাকে বলা হয় বুদ্ধি, যুক্তি ও ভাষার দেবতা। এই দিনটি সাধারণত জ্ঞানের চর্চা, লেখালেখি বা পড়াশোনার জন্য শুভ বলে ধরা হয়। ইংরেজি ও বাংলা দুই ভাষাতেই বুধ বা Wednesday হল চিন্তা-শক্তির প্রতীক।

Thursday

“Thursday” এসেছে Thor’s day থেকে। Thor ছিলেন নর্স পুরাণের বজ্র, যুদ্ধ এবং শক্তির দেবতা। রোমান ক্যালেন্ডারে এই দিনটি ছিল Jupiter বা ‘জুপিটার’-এর নামে। জুপিটার ছিলেন রোমান দেবরাজ ও আকাশের দেবতা।

বাংলায় বলা হয় “বৃহস্পতিবার”, যা এসেছে বৃহস্পতি গ্রহ ও দেবতার নাম থেকে। হিন্দু ধর্মে বৃহস্পতিকে জ্ঞান, ধর্ম ও উপদেশের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। শিক্ষকতা, উপদেশ ও আধ্যাত্মিকতা এই দিনের মূল থিম। অর্থাৎ, Thursday বা বৃহস্পতি—দুটিই একভাবে উচ্চতর জ্ঞান আর আকাশের বিশালতার প্রতীক।

Friday

“Friday” এসেছে Frigg’s day থেকে। ফ্রিগ ছিলেন ভালোবাসা, গৃহস্থালি এবং পরিবার রক্ষার নর্স দেবী। রোমান ক্যালেন্ডারে এই দিনটি ছিল Venus বা প্রেমের দেবীর নামে—dies Veneris

বাংলায় বলা হয় “শুক্রবার”। এটি এসেছে ‘শুক্র’ বা ‘Venus’ গ্রহ এবং হিন্দু দেবতা ‘শুক্রাচার্য’ এর নাম থেকে। শুক্রাচার্য ছিলেন প্রেম, সম্পর্ক এবং ন্যায়ের প্রতীক। অনেক সংস্কৃতিতে শুক্রবারকে একটি শুভ দিন ধরা হয়, আর মুসলিমদের জন্য এই দিনটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এটি আরাম, পারিবারিক সময় আর প্রেমের প্রতীক।

Saturday

“Saturday” হল একমাত্র দিন যার নাম রোমান দেবতা Saturn-এর নাম থেকে সরাসরি এসেছে। Saturn ছিলেন কৃষি, সময় এবং শৃঙ্খলার দেবতা। রোমান ক্যালেন্ডারে dies Saturni বলা হত।

বাংলায় বলা হয় “শনিবার”, যা এসেছে ‘শনিদেব’ ও গ্রহ ‘শনি’ থেকে। শনিকে ভয়ংকর ও কঠোর পরীক্ষার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। বিশ্বাস করা হয়, এই দিনে সতর্ক থাকা উচিত কারণ শনি বিচার দেন কর্ম অনুযায়ী। যদিও অনেকেই এই দিনটিকে বিশ্রাম বা ছুটির দিন হিসেবে চেনে, কিন্তু আধ্যাত্মিকভাবে এই দিনটি আত্মপর্যালোচনা ও শুদ্ধতার জন্য ধরা হয়।

Sunday

“Sunday” শব্দটি এসেছে Sun’s day থেকে, অর্থাৎ সূর্যের দিন। এটি রোমান dies Solis থেকে এসেছে, যার মানে ছিল সূর্যদেবের দিন। সূর্যকে সব সময় শক্তি, আলোর এবং জীবনের উৎস হিসেবে ধরা হয়।

বাংলায় বলা হয় “রবিবার”, যা এসেছে ‘রবি’ বা সূর্য গ্রহ ও দেবতার নাম থেকে। রবি মানে আলো, শক্তি এবং উৎস। হিন্দু সংস্কৃতিতে রবিকে দেবতারূপে পূজা করা হয়। রবিবার মানে হলো নতুন শুরু, উদ্যম এবং সৃজনশীলতা। এটি অনেকের কাছে ছুটির দিন হলেও, এই দিনটি আত্মিক এবং মানসিক শক্তি পুনরায় অর্জনের সময় হিসেবেও ধরা হয়।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ

“সাত দিনের নাম ইংরেজিতে” এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? তাহলে চলুন জেনে নেই সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তরগুলো-

কেন সপ্তাহে সাতটি দিন থাকে?

সপ্তাহে সাতটি দিন রাখার ধারণা এসেছে ব্যাবিলনীয় সভ্যতা থেকে, যাদের জ্যোতির্বিজ্ঞান অনুসারে সাতটি গ্রহ ছিল।

বাংলার দিনের নামগুলো কোথা থেকে এসেছে?

বাংলার দিনের নামগুলো মূলত হিন্দু ধর্ম ও সংস্কৃত ভাষা থেকে এসেছে, যেখানে প্রতিটি দিনের নাম একেকটি গ্রহ ও দেবতার নামে রাখা হয়েছে।

উপসংহার

বন্ধু, আমরা প্রতিদিন যেসব শব্দ ব্যবহার করি, যেমন দিনের নাম—তা কিন্তু কেবলই একটা নাম না। এর পেছনে রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস, সংস্কৃতি, ধর্ম আর বিজ্ঞান। বাংলা আর ইংরেজি নামগুলো শুনতে আলাদা হলেও তাদের পেছনের ধারণা অনেকটা একই রকম। চাঁদ, সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র বা দেবতাদের প্রতি শ্রদ্ধা থেকেই এই নামগুলো এসেছে।

যখন তুমি আবার বলবে “আজ মঙ্গলবার” বা “It’s Tuesday!”, তখন মনে পড়ে যাবে এর পেছনের সেই যোদ্ধা দেবতার গল্প! আজকে দিনের নামগুলো নিয়ে যতটুকু জানলে, আশা করি এখন থেকে প্রতিদিন আর একঘেয়ে লাগবে না, বরং মনে হবে—প্রতিটি দিন যেন একটি নতুন গল্প। তুমি যদি এই বিষয়টা আরও গভীরভাবে জানতে চাও, তবে বলতে পারো—আমি আরও গল্প শোনাতে রাজি আছি!

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *