|

ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে?

বাংলাদেশ একটি দ্রুত উন্নয়নশীল দেশ এবং একে দক্ষতা, উন্নতি, এবং ডিজিটালাইজেশনের পথে একটি নতুন যুগে প্রবেশ করতে দেখা যাচ্ছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও নতুন প্রযুক্তির প্রভাব বেশ স্পষ্ট। এই প্রযুক্তির এক নতুন দৃষ্টান্ত হলো ই-পাসপোর্ট। ই-পাসপোর্ট হলো ডিজিটাল পাসপোর্ট যা আপনি সহজেই অনলাইনে আবেদন করতে পারেন এবং এটি বিশ্বের অন্যান্য দেশের সীমান্তে সহজভাবে চলাচল করার জন্য প্রয়োজনীয় এক দস্তাবেজ। এই ব্লগে, আমি আপনাদেরকে ই-পাসপোর্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো এবং কিভাবে এটি বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটি বড় সুবিধা নিয়ে আসছে তা তুলে ধরবো।

ই পাসপোর্ট কি?

ই-পাসপোর্ট বা ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট হলো একটি আধুনিক পাসপোর্টের ধরনের এক বিকল্প, যা একটি চিপ বা মাইক্রোচিপ অন্তর্ভুক্ত থাকে। এই চিপের মধ্যে ব্যক্তির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংরক্ষিত থাকে এবং এটি পাসপোর্টের বৈধতা যাচাই করতে সাহায্য করে। বিশ্বব্যাপী এটি একটি নিরাপদ পাসপোর্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যেটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং সঠিক ব্যক্তিগত তথ্য নিশ্চিত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সরকার ২০২০ সালে ই-পাসপোর্ট চালু করে এবং এই পাসপোর্টের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ভ্রমণে সুবিধা আরও সহজ ও নিরাপদ হয়ে উঠেছে। ই-পাসপোর্টে আপনাকে যে তথ্য দেওয়া হয় তা সাধারণত একটি মাইক্রোচিপে সংরক্ষিত থাকে, যা নিরাপত্তা স্ক্যানার দ্বারা পড়া যায়। এর মাধ্যমে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সীমান্তে আরও দ্রুত প্রবেশ এবং যাচাইয়ের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। ই-পাসপোর্টের মাধ্যমে অবৈধ পাসপোর্টের ব্যবহার কমিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি দেশব্যাপী নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে।

ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে?

ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা এখন অনেক সহজ এবং ডিজিটাল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করা যায়। তবে, ই-পাসপোর্ট পেতে কিছু নির্দিষ্ট কাগজপত্র এবং প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। ই-পাসপোর্ট করার জন্য যে কাগজপত্র এবং প্রক্রিয়া জানা দরকার, তা বিস্তারিতভাবে নীচে আলোচনা করা হলো।

আবেদন প্রক্রিয়া

ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হলে প্রথমে আপনাকে বাংলাদেশ সরকারের নির্ধারিত ওয়েবসাইটে গিয়ে একটি অনলাইন ফর্ম পূরণ করতে হবে। ফর্ম পূরণের সময় আপনাকে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য যেমন নাম, ঠিকানা, জন্মতারিখ, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর এবং আপনার যোগাযোগের তথ্য সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে। এর পর, আপনাকে একটি ছবি আপলোড করতে হবে যা আপনার মুখের স্পষ্ট ছবি ও সঠিক মাপ অনুযায়ী হতে হবে। ফর্মটি পূরণের পর একটি রেফারেন্স নম্বর দেওয়া হবে, যা পরবর্তীতে আপনার আবেদন প্রক্রিয়ার ট্র্যাকিংয়ের জন্য প্রয়োজন হবে।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

ই-পাসপোর্ট পেতে কিছু নির্দিষ্ট কাগজপত্রও জমা দিতে হয়। প্রথমত, আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি জমা দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, আপনার বর্তমান পাসপোর্টের কপি যদি থাকে (যদি আপনি পুরনো পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন), সেটা জমা দিতে হবে। এছাড়া, আপনার জন্ম সনদ এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণপত্রও প্রয়োজন হতে পারে। আরও, কোনো আগের ভ্রমণ কাগজপত্র (যদি থাকে) জমা দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। এই কাগজপত্রগুলি যাচাই করে আপনার আবেদনটি প্রসেস করা হয়।

ছবি এবং আঙুলের ছাপ

ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার সময় আপনাকে একটি নতুন ছবি প্রদান করতে হবে, যা সরকার নির্ধারিত মানদণ্ড অনুসরণ করে তোলা হতে হবে। এছাড়া, আঙুলের ছাপও নেয়া হয়, যা পাসপোর্টের নিরাপত্তা এবং ব্যক্তিগত যাচাইয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ছবি এবং আঙুলের ছাপ নেয়া হবে যখন আপনি পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে আবেদন করবেন।

পাসপোর্ট অফিসে উপস্থিতি

ই-পাসপোর্ট আবেদনের পর, আপনাকে পাসপোর্ট অফিসে যেতে হবে। পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে নির্দিষ্ট সময় এবং তারিখ অনুযায়ী আপনার কাগজপত্র এবং অন্যান্য তথ্য যাচাই করা হবে। অফিসে উপস্থিত হওয়ার পর, সবকিছু ঠিক থাকলে আপনি পাসপোর্ট সংগ্রহের জন্য এক নির্দিষ্ট সময় জানিয়ে দেয়া হবে। সেদিন আপনি আপনার পাসপোর্টটি সংগ্রহ করতে পারবেন।

সময়সীমা ও ফি

ই-পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে। সাধারাণত আবেদন থেকে পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার সময় ১০-১৫ কার্যদিবসের মধ্যে হয়ে থাকে, তবে এই সময়সীমা কখনো কখনো বাড়তে পারে। আবেদন ফি হিসেবে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করতে হয়, যা নির্ধারিত সরকারের প্রক্রিয়া অনুযায়ী।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ

“ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে?” এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? তাহলে চলুন জেনে নেই সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তরগুলো-

ই-পাসপোর্ট কিভাবে পাওয়া যায়?

ই-পাসপোর্ট পেতে বাংলাদেশ সরকারের ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইন আবেদন করতে হয় এবং নির্দিষ্ট কাগজপত্র জমা দিতে হয়।

ই-পাসপোর্টের বৈশিষ্ট্য কী?

ই-পাসপোর্টের মধ্যে একটি মাইক্রোচিপ থাকে যা ব্যক্তির তথ্য নিরাপদে সংরক্ষণ করে এবং সুরক্ষিতভাবে যাচাই করা সম্ভব।

উপসংহার

ই-পাসপোর্ট বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন এবং অত্যন্ত প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত উদ্যোগ। এটি বিদেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে দেশের মানুষকে আরও দ্রুত, নিরাপদ এবং সহজ পদ্ধতিতে সহায়তা প্রদান করবে। পাশাপাশি, এটি নিরাপত্তা ব্যবস্থাও আরো উন্নত করবে এবং পাসপোর্টের জালিয়াতি কমাতে সাহায্য করবে। ই-পাসপোর্ট ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের একটি সশক্ত আন্তর্জাতিক পরিচয় তৈরি হবে এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে। বাংলাদেশের ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তির আরও ব্যাপক ব্যবহার হলে এটি পুরো জাতির জন্য একটি উল্লেখযোগ্য উন্নতি হতে পারে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *